কলা, আমাদের সকলের প্রিয় এই ফলটির একটি মজার বৈশিষ্ট্য হলো এর বাঁকানো আকৃতি। প্রায় সব মৌসুমেই সহজলভ্য এবং সুলভ মূল্যের এই ফলটির বাঁকানো আকৃতি নিয়ে আমাদের কারোরই কোনো প্রশ্ন জাগে না। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, কেন কলা সোজা হয় না? অন্যান্য ফলের মতো কেনই বা এটি গাছে ঝুলে থাকে না? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে কলার বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার একটি বিশেষ বৈজ্ঞানিক কারণে।
নেগেটিভ জিওট্রপিজম: কলার বাঁকানোর রহস্য
কলার বাঁকানো আকৃতির মূলে রয়েছে একটি বিশেষ উদ্ভিদ প্রক্রিয়া, যার নাম "নেগেটিভ জিওট্রপিজম"। এই প্রক্রিয়ায়, উদ্ভিদের অঙ্কুর এবং পাতা মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে উপেক্ষা করে সূর্যের আলোর দিকে বাড়তে থাকে। কলার ক্ষেত্রে এটি আরও সুস্পষ্ট। প্রথমে মাটির দিকে নিম্নমুখী হলেও, ক্রমশ বৃদ্ধির সাথে সাথে কলার মোচা সূর্যের আলোর টানে উপরের দিকে বাঁকতে শুরু করে।
অক্সিনের ভূমিকা
"নেগেটিভ জিওট্রপিজম" প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে "অক্সিন" নামক উদ্ভিদ হরমোন। উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং বিকাশে অক্সিনের ভূমিকা অপরিসীম। কলার ক্ষেত্রে, সূর্যের আলো যে দিক থেকে আসে, সেই দিকের বিপরীত দিকে অক্সিনের ঘনত্ব বেশি থাকে। এর ফলে, সেই দিকের কোষগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি বেড়ে যায় এবং কলা সূর্যের আলোর দিকে বাঁকতে থাকে।
কলার বৃদ্ধি এবং ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট
কলা গাছ মূলত ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্টের উদ্ভিদ। এই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং ঘন বন থাকায় সূর্যের আলো মাটিতে পৌঁছাতে বেশ যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়। তাই টিকে থাকার জন্য কলা গাছ এবং তার ফল "নেগেটিভ জিওট্রপিজম" প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সূর্যের আলোর জন্য প্রতিযোগিতা করে। এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে তাদের বাঁকানো আকৃতি। এই আকৃতির কারণে তারা অন্যান্য উদ্ভিদের ছায়া পেড়িয়ে সূর্যের আলো সংগ্রহ করতে পারে।
সব কলা কি বাঁকা হয়?
এটা সত্যি যে সকল প্রজাতির কলা বাঁকা হয় না। কিছু প্রজাতির কলা সোজা হয়। এই প্রজাতির কলা গাছের অঙ্কুর এবং পাতায় অক্সিনের পরিমাণ কম থাকে বিধায় এরা "নেগেটিভ জিওট্রপিজম" প্রক্রিয়া প্রদর্শন করে না। ফলে এই সকল প্রজাতির কলা সোজা হয়।
কলার বাঁকানো আকৃতি কোন দুর্ঘটনা নয়, বরং প্রকৃতির একটি অভিনব রহস্য। "নেগেটিভ জিওট্রপিজম" এবং "অক্সিন" হরমোনের মিথস্ক্রিয়ায় তৈরি হয় এই অদ্ভুত আকৃতি। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির প্রতিটি সৃষ্টির পিছনে লুকিয়ে আছে কোন না কোন কারণ।
টিম ই-নলেজ।