দোয়া প্রিয়জনদের জন্য মূল্যবান উপহার ?
জীবনে চলার পথে প্রতি ক্ষণে, প্রতি মূহুর্তে কত কত মানুষের সাথে পরিচয় ঘটে। তাদের অনেকের সাথে আবার গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তারা হয়ে ওঠেন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিছুক্ষণ নিরবে বসে থাকলেই মনে পড়ে যায় তাদের কথা। ভোলা যায়না তাদের দয়া ও ইহসানের কথা।
.
যখন আমি ছোট্ট ছিলাম মনে পড়ে তখনকার বাল্যবন্ধুদের কথা। যাদের সাথে একসাথে মাঠে খেলতে যেতাম, গোল্লাছুট, ক্রিকেট ফুটবল কানামাছি আরো কত কত খেলা। ছোট্ট হৃদয়ে কত শত কথা মনে আসতো যেমন চাঁদটা মনে হয় আমার সাথে চলছে, আকাশটা বুঝি অমুক জায়গায় গিয়ে নিচে নেমে গেছে, এসব কথা অন্য কারো সাথে বলতে পারতামনা তাই বন্ধুরা সবাই মিলে একে অপরের সাথে নিজেদের ভাবনাগুলো শেয়ার করতাম। এরপর ক্লান্ত হয়ে গেলে একজন আরেকজনকে বাসায় নিয়ে মায়ের হাতের রান্না করা খাবার খাওয়াতাম। ভালো কোন খাবার পেলে বন্ধুদের সবার সাথে ভাগ করে খেতাম। সেই বন্ধুদের অনেকেই আজ হারিয়ে গেছে, জানিনা আজ তারা কে কোথায় কি অবস্থায় আছে।
.
এরপর যখন একটু বড় হলাম দূরের এক মাদ্রাসায় গিয়ে ভর্তি হলাম, পরিচয় হলো নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে, আবাসিক মাদ্রাসায় পরিবার পরিজন থেকে দূরে থাকায় এই বন্ধুরাই ছিলো পরিবারের মত। জ্বর হলে মাথায় পানি দিয়ে দিতো তারা, অসুস্থ হলে এমনভাবে সেবা শুশ্রুষা করতো;পরিবারের কথা মনেই হতোনা,
সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে মন খারাপ থাকলে সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা সামর্থ্যের মধ্যে ভালো কিছু রান্না করে খাওয়া ছিলো তখনকার বিনোদনের মূল উপায়। সেই বন্ধুরাও আজ জীবিকার তাগিদে বা জীবনের প্রয়োজনে কে কোথায় হারিয়ে গেছে কোন খোঁজ নেই।
.
এরপর যখন কর্মজীবন শুরু হয় তখন আবার পরিচয় ঘটে আরো নতুন কিছু মানুষের সাথে যাদের সাথে আগে কখনো পরিচয় ছিলোনা তারপরও তারা কত আপন করে নিলেন আমাকে, সুখে দুখে পাশে দাড়িয়েছেন নিঃস্বার্থভাবে, শোক সংকট বিপদ আপদে তারাই ছিলেন একান্ত আপনজন। কিন্তু একটা সময় তাদেরকেও ছাড়তে হয়েছে, খুঁজতে হয়েছে নতুন ঠিকানা।
.
সময়ের ব্যাবধানে এমন কত শত বন্ধুকে যে ছেড়ে আসতে হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই, আজও মনে পড়ে তাদের কথা, মনে পড়ে তাদের ইহসান এবং দয়ার কথা। মন চায় তাদের জন্য অনেক কিছু করি, তাদের সেই সব ইহসানের বদলা স্বরূপ কিছু করতে না পারি, অন্তত কৃতজ্ঞতাটুকু স্বীকার করি। কিন্তু সময় সুযোগের অভাবে এর কিছুই সম্ভব হয়ে ওঠেনা। কিন্তু এটা কি ঠিক! তাদের এভাবে ভুলে যাওয়া কতটুকু সমীচীন!
.
কেউ আমাদের উপর দয়া করলে বা ভালো কিছু করলে উচিত তো হলো তার জন্যও অনুরূপ কিছু করা, না পারলে অন্তত দোয়ায় শরীক রাখা। কিন্তু আমরা তো এমন কৃপন হয়ে গেছি যে, কিছু করা তো দূরের কথা দোয়াতেও স্মরণ রাখিনা। অথচ হাদীস শরীফে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
مَنْ صَنَعَ إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِئُوهُ فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا مَا تُكَافِئُونَهُ فَادْعُوا لَهُ حَتَّى تَرَوْا أَنّكُمْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ.
অর্থাৎ কেউ তোমাদের জন্যে ভালো কিছু করলে প্রতিদান স্বরূপ তুমিও তার জন্য অনুরূপ কিছু কর। যদি তা না পারো অর্থাৎ তার জন্য কিছু করার সুযোগ বা সামর্থ্য না থাকে, তাহলে তার জন্য এই পরিমাণ দোয়া কর, যাতে মনে হয়- যথাযথ প্রতিদান তুমি তাকে দিয়েছ। -সুনানে আবু দাউদ- ১৬৭২; সুনানে নাসায়ী- ২৫৬৭
.
এই হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত হয়েছে, মুসনাদে আহমাদের এক বর্ণনায় এ জায়গায় আরো একটা বিষয় এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কেউ তোমাদেরকে হাদিয়া দিলে তোমরাও তাকে অনুরূপ হাদিয়া দাও, যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে তার জন্য এই পরিমাণ দোয়া করো যাতে মনে হয় যে যথাযথ প্রতিদান তুমি তাকে দিয়েছো।
এই দুটি হাদীসে আমাদের জন্য কয়েকটি শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে,
১। কেউ আমার প্রতি ইহসান করলে তার প্রতিও অনুরূপ ইহসান করা উচিত।
২। দোয়াও ইহসানের বদলা দেয়ার শক্তিশালী মাধ্যম। যদি কারো পক্ষে ইহসানের প্রতিদানে অনুরূপ কিছু করা সম্ভব না হয়, তাহলে তার বেশি দোয়া করা উচিত, পরিমানটা এত বেশি হওয়া উচিত যাতে মনে হয় যে, তার ইহসানের যথাযথ বদলা দেয়া হয়েছে।
.
শুধু যে ইহসানের বদলা হিসেবেই আমরা দোয়া করবো বিষয়টি এমন নয় বরং সদা সর্বদা যখনই দোয়ায় হাত তুলবো অন্য সকল মুমিন-মুসলিম ভাই বোনদের কথা স্মরণ রাখবো। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে আমাদের এমন কিছু দোয়া শিখিয়েছেন যাতে নিজেদের পাশাপাশি অন্যন্য মুমিন ভাই বোনদের জন্যেও দোয়া করা হয়ে যায়।
সুরা ইব্রাহীমে এমন একটি দোয়া এসেছে, দোয়াটি করেছিলেন সাইয়িদুনা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের, বলেছিলেন
رَبَّنَا اغْفِرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلْمُؤْمِنِیْنَ یَوْمَ یَقُوْمُ الْحِسَابُ
অর্থাৎ হে আমাদের প্রতিপালক! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়েন। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৪১
.
সুরা হাশরের এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা আমাদের আরেকটি দোয়া শিখিয়েছেন, দোয়াটি হলো –
وَ الَّذِیۡنَ جَآءُوۡ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا اغۡفِرۡ لَنَا وَ لِاِخۡوَانِنَا الَّذِیۡنَ سَبَقُوۡنَا بِالۡاِیۡمَانِ وَ لَا تَجۡعَلۡ فِیۡ قُلُوۡبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا رَبَّنَاۤ اِنَّکَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ
যারা তাদের পরে এসেছে (অর্থাৎ মুহাজির এবং আনসারদের পর যারা ঈমান এনেছে, কেয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মুসলিম এই আয়াতের উদ্দেশ্য) তারা বলে: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে গত হয়ে গেছেন তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং মুমিনদের ব্যাপারে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু । সুরা হাশর ৫৯;১০
.
এভাবে আরো অনেক জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে অপর মুমিন ভাই বোনদের জন্য দোয়া করা শিখিয়েছেন, দোয়ার ক্ষেত্রে অন্য মুমিন মুসলিম ভাই বোনদের শরিক রাখার অনেক ফায়দা আছে। সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস এসেছে।
হাদিসটি উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
دَعْوَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ لأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ عِنْدَ رَأْسِهِ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لأَخِيهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ آمِينَ وَلَكَ بِمِثْلٍ
কোনো মুসলিম অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অগোচরে (কিংবা তার অনুপস্থিতিতে) দুআ করলে, সেই দুআ কবুল হয়। সে যখন তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দুআ করে, তখন তার খুব নিকটে নিযুক্ত একজন ফেরেশতা বলেন, ‘আমীন’ (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমার এই দুআ কবুল করুন) এবং তোমাকেও এমনটি (অর্থাৎ এই কল্যাণ) দান করুন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৩৩
.
এই হাদীসটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরো প্রসারিত করতে উদ্বুদ্ধ করে । অন্যের প্রতি কল্যানকামনা ও উপকার করার বোধকে জাগিয়ে তোলে। তার অগোচরে কাউকে না জানিয়ে না দেখিয়ে লৌকিকতামুক্তভাবে তার জন্য কল্যানকামনা করতে এবং মহান মালিকের দরবারে তার জন্য দোয়ায় নিমগ্ন হতে উতসাহিত করে। পাশাপাশি এই আমলের যে কত বড় ফায়দা তাও এই হাদীস থেকে বুঝে আসে। আল্লাহ তাআলার একান্ত অনুগত বান্দা ফেরেশতারা যেহেতু নিস্পাপ তাই তাদের দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কেউ যখন অপর ভাইয়ের দোয়া করে তখন সে ফেরেশতাদের দোয়া লাভে ধন্য হয়। তারা তার দোয়ার সাথে আমীন আমীন বলে এবং এবং দোয়া করে আল্লাহ তাআলা তোমাকেও অনুরূপ কল্যান দান করুন। সুবহানাল্লাহ ।
.
সহীহ মুসলিমের প্রখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ এই হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক জায়গায় বলেন;
وَكَانَ بَعْضُ السَّلَفِ إِذَا أَرَادَ أن يدعو لنفسه يدعولأخيه الْمُسْلِمِ بِتِلْكَ الدّعْوَةِ لِأَنّهَا تُسْتَجَابُ وَيَحْصُلُ لَهُ مِثْلُهَا.
পূর্ববর্তী মনীষীগণ যখন নিজের জন্য কোনো বিষয়ে দুআ করতে চাইতেন,তখন আগে অন্য মুসলিম ভাইয়ের জন্য সেই দুআ করতেন। কেননা অন্য মুসলিম ভাইয়ের জন্য কৃত দুআ কবুল হয় এবং নিজের জন্যও অনুরূপ হাসিল হয়।
.
এ বিষয়ে সুনানে আবু দাউদে আরো সুস্পষ্টভাবে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, হাদিসটি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
إِنَّ أَسْرَعَ الدُّعَاءِ إِجَابَةً دَعْوَةُ غَائِبٍ لِغَائِبٍ
অর্থাৎ ঐ দোয়া সবচেয়ে দ্রুত কবুল হয়, যা কেউ অপর অনুপস্থিত ব্যাক্তির জন্য করে। আবু দাউদ-১৫৩৫
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই আমলে যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন সুম্মা আমীন
করেছেন
TamimAdnani
ইসলাম যিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালা কে বাদ!
.
আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে, নবী দৌহিত্র হযরত হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু কারবালার ময়দানে নিজের জীবন উৎসর্গ করে আমাদেরকে দিয়ে গেছেন বিজয়ের জন্য কুরবানী পেশ করার অনুপম শিক্ষা । সেই কারবালা আজও আমাদেরকে ইসলামের জন্য আত্মোৎসর্গের প্রেরণা জোগায়। সে থেকে যুগে যুগে উম্মাহর বীর যোদ্ধারা এই প্রেরণা ধারণ করে সকল জালিম শাসকের ভিত নাড়িয়ে আসছেন। কারবালার সেই কুরবানী কখনোই বৃথা যায়নি। সুতরাং এখনো যারা কুরবানী দিচ্ছেন, তাদের এই কুরবানীও বৃথা যাবে না। অচিরেই তাঁরা ঘুরে দাঁড়াবে এবং সমগ্র উম্মাহকে বিজয়ের সুসংবাদ শুনাবে। বিজয় অবশ্যই তাদের পদচুম্বন করবে, বি-ইযনিল্লাহ।
.
বর্তমান সময়ের আফগানিস্তান এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আফগানবাসী আজকে যে বিজয়ের স্বাদ ভাগাভাগি করছেন, এর পূর্বে দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত তাদেরকে শুধু রক্তের নজরানা পেশ করতে হয়েছে। দীর্ঘ চল্লিশটি বছর তারা দুই-দুইটি বিশ্বপরাশক্তির বিরুদ্ধে রক্তের আদান-প্রদান করেছেন। শত্রুর নাপাক রক্তে খোদার জমিন যেমন পাক করেছেন তেমনি আল্লাহর দীন যিন্দা করার মহান লক্ষ্যে অকাতরে ঢেলে দিয়েছেন নিজেদের পবিত্র রক্তও।
.
৯/১১ এর বরকতময় হামলার পর বোম্বিং করে দুই লক্ষাধিক আফগান মুসলিমকে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসী আমেরিকা। যাদের মধ্যে দূর্বল নারী, নিষ্পাপ শিশু আর বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যাই ছিল বেশি। কিন্তু তালিবানকে তারা দমাতে পারেনি। কিছুদিনের মধ্যেই তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। যুদ্ধের হুংকার ছেড়ে আফগানের পাহাড়-পর্বত কাঁপিয়ে তুলেছেন। সর্বাধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশ্বের আত্মগর্বিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং মহান রবের ইচ্ছায় তাঁরা বিজয়ী হয়েছেন।
.
আজকে আফগান জাতির বিদ্যমান বিজয়ের ইতিহাস যখন ঘাঁটতে শুরু করি তখন নির্বিচার গণহত্যার এক ভয়াবহ চিত্র খুঁজে পাই। যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে নিরীহ আফগানদের তাজা রক্তে। তখন কে ভাবতো যে, গণহত্যার শিকার এই জাতিই একদিন ঘুরে দাঁড়াবে ! গোটা বিশ্বে মোড়লগিরি করে বেড়ানো এই সন্ত্রাসী দাম্ভিক আমেরিকার মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে ! আমেরিকার অর্থনীতিতে ধ্বস নামাবে !! আমেরিকার বিরুদ্ধে চলমান এই যুদ্ধে আফগানিস্তান একসময় বিজয় লাভ করবে, একটা সময় পর্যন্ত এটা কেউ কল্পনাও করেনি। কিন্তু আজকের বিশ্ব এই অবিশ্বাস্য বাস্তবতার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়েছে। আমেরিকা নাকে খত দিয়ে আফগান ছেড়ে পালিয়েছে।
.
তাই আজকের বিশ্ব বর্বর ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজায় যে বর্বতার সাক্ষী হচ্ছে, আমাদের মহান রবের কুদরতের উপর ভরসা করে আমরা বিশ্ববাসীকে এই ভবিষ্যৎবাণী শুনাতে চাই যে, অচিরেই এই বিশ্ব বিপরীত চিত্রটিরও সাক্ষী হবে, যেখানে মুসলিমদের রক্তনেশায় উন্মাদ আজকের এই বর্বর ইসরায়েল স্বজাতীর লাশের সারি সামাল দিতে হিমশিম খাবে। আজকের এই দম্ভ আর অহমিকা অচিরেই মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। পৃথিবীর মানচিত্রে ইসরায়েল নামক কোনো জারজ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব স্থান পাবে না। আগামী প্রজন্ম যে মানচিত্র দিয়ে পৃথিবীর ভৌগোলিক সীমানা তালাশ করবে সেখানে তারা ইসরায়েল নামক কোনো রাষ্ট্র পাবে না ইনশাআল্লাহ।
আমরা এটা সেই মহান রবের শক্তির উপর আস্থা রেখেই বলছি, যিনি ইসরায়েলের প্রভূ আমেরিকাকেও খোরা/সানের মাটিতে পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন। যে আমেরিকার সমর্থন আর সহযোগিতা পেয়ে আরব বিশ্বের চোখের সামনে এই জারজ রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছে এবং আজও যার সহযোগিতা পেয়ে সে গাজায় নির্বিচার গণহত্যা চালাচ্ছে, সেই আমেরিকাকেও তার প্রাপ্য পাওনা মুজাহিদ্গণ বুঝিয়ে দেবেন ইনশাআল্লাহ। আজকের এই আঘাত ও বিপদ শীঘ্রই বিজয়ের রূপ লাভ করবে বি ইজনিল্লাহ। মূলত কুরবানী ছাড়া কোনো বিজয় আসে না। সমগ্র উম্মাহর পক্ষ থেকে সেই কুরবানী দিয়ে যাচ্ছেন গাজাবাসী। তাদের এই ত্যাগ আর কুরবানীর কথা আমরা কোনোদিনও ভুলে যাব না।
.
প্রিয় গাজাবাসী! বিজয়ের যে ভিত্তি আপনারা স্থাপন করে যাচ্ছেন, সে বিজয় অসম্পূর্ণ রেখে কিছুতেই আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেব না। আমরা ততদিন পর্যন্ত শান্তিতে ঘুমাতে পারব না, যতদিন না আমাদের মাসুম বাচ্চাদের প্রতিশোধ গ্রহণ করি। আপনাদের শরীর থেকে ঝরানো প্রতি ফোঁটা রক্তের কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব না চুকিয়ে আমরা ক্ষান্ত হব না। সর্বোপরি আপনাদের এক ফোঁটা রক্তও আমরা বৃথা যেতে দেব না।
“আপনাদের রক্ত; সে তো আমাদেরই রক্ত, আপনাদের সন্তানদের রক্ত; সে তো আমাদের সন্তানদেরই রক্ত! সুতরাং রক্তের বদলা রক্ত আর ধ্বংসের বদলা ধ্বংসের দ্বারাই নেওয়া হবে। আমরা মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমরা কখনোই আপনাদের পরিত্যাগ করব না; যতক্ষণ না বিজয় অর্জিত হয় কিংবা শাহাদাতের সেই সুধা পান করে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করি, যে সুধা পান করেছেন হযরত হামজাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব”। শাইখ উসামা বিন লাদেনের এই কথাগুলি আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আজকের এই উদাসীন বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
.
আরব রাষ্ট্রগুলোর জঘন্য শঠতা আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি ব্যথিত করেছে। মূলত ক্ষমতা ছাড়া এরা আর কিছুই বুঝতে চায় না। ফিলিস্তিনের প্রবেশপথগুলিও এসব মুরতাদ শাসকেরা বন্ধ করে রেখেছে। এদের নির্লজ্জ সহযোগিতা না থাকলে ইসরায়েল কোনোদিনও গাজার মুসলমানদের অবরোধ করতে পারত না। ফিলিস্তিনের প্রবেশপথগুলো আজ খোলা থাকলে উম্মাহর মুজাহিদরা পঙ্গলপালের ন্যায় ছুটে যেত ফিলিস্তিন অভিমুখে। ধুলোয় মিশিয়ে দিত ওদের অস্ত্রের বড়াই। গাজায় হামলা করবে তো দূরে থাক; ইসরায়েলের মাটিতেও তারা একমুহূর্তের জন্য নিজেদের নিরাপদ ভাববার সুযোগ পেত না। আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকা এসে সাহায্য করতে পারছে ইসরায়েলকে, কিন্তু তাদের পার্শ্ববর্তী আরব রাষ্ট্রগুলি সামরিক সাহায্য তো দূরের কথা; সীমান্ত পুরোপুরি খুলে দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ পৌঁছতেও দিচ্ছেনা। পাছে না আবার আমেরিকার রোষাণলে পড়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়! ক্ষমতার জন্য এরা সবকিছু করতে প্রস্তুত।
.
মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে এদের এজাতীয় গাদ্দারী একদিন লেখা হবে ইতিহাসের পাতায়। পরবর্তী প্রজন্ম জানবে, আরবের ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার লোভে নিজ ভাইদেরকে ইহুদীদের করুণার উপর ছেড়ে দিয়ে নিজেরা মজে ছিল হারাম বিনোদনে। গাজাবাসীর অভিশাপে আমেরিকা যখন পুড়ে ছারখার হবে তখন সেই উত্তাপে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে এসকল মুনাফিক আরব শাসকেরাও।
.
আমরা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে গাজার মুজাহিদ ভাইদের জন্য অবিচলতার দোয়া কামনা করছি। আল্লাহ তাআলা গাজার মুজাহিদ ভাইদের আরো হিম্মত দান করুন। শত্রুকে তাঁর উপযুক্ত পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য দান করুন।
.
প্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা, আপনারা কখনোই এপথে নিজেদেরকে একা ভাববেন না। বিশ্বের সকল মুজাহিদ আপনাদের চলা এপথে চলার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। শুধুমাত্র সুযোগের অপেক্ষা। যে জিহাদের সূচনা আপনারা করে দিয়েছেন এর শেষ না করে আমরা কখনোই শান্ত হব না ইনশাআল্লাহ। জিহাদের বরকতেই আবারও একদিন আমরা বিশ্ববাসীকে ফিরিয়ে দেব ইসলামী খেলাফতের মহান নেয়ামত। সেদিন মাকড়সার জালের মতোই ধ্বসে পড়বে জালিম শাসকদের শাহী মসনদ, ইনশাআল্লাহ।
করেছেন
TamimAdnani
শত্রু-মিত্র যাচাইয়ের মূলনীতি-
.
আমরা প্রায় সময়ই শত্রু-মিত্র চিনতে ভুল করি। শত্রুকে মনে করি বন্ধু, আর বন্ধুকে মনে করি শত্রু। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনুল কারীমে শত্রু-মিত্র যাচাইয়ের মৌলিক সূত্র বলে দিয়েছেন এবং কার সাথে কেমন সম্পর্ক কেমন হবে তাও তিনি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوۡا بِطَانَۃً مِّنۡ دُوۡنِکُمۡ لَا یَاۡلُوۡنَکُمۡ خَبَالًا ؕ وَدُّوۡا مَا عَنِتُّمۡ ۚ قَدۡ بَدَتِ الۡبَغۡضَآءُ مِنۡ اَفۡوَاهِهِمۡ ۚۖ وَ مَا تُخۡفِیۡ صُدُوۡرُهُمۡ اَکۡبَرُ ؕ قَدۡ بَیَّنَّا لَکُمُ الۡاٰیٰتِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ ﴿۱۱۸﴾
হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের নিজেদের অর্থাৎ মুমিনদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না। তারা তোমাদের মারাত্মক ক্ষতি কামনা করে। তাদের মুখ থেকে তো শত্রুতা প্রকাশ পেয়েই গিয়েছে। আর তাদের অন্তরসমূহ যা গোপন করে, তা আরো ভয়াবহ। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্ট বর্ণনা করেছি, যাতে তোমরা উপলব্ধি করতে পারো। (সুরা আলে ইমরান-১১৮)
.
এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা শত্রু-মিত্র বানানোর মূলনীতি বলে দিয়েছেন। মূলনীতিটা হলো আল্লাহ এবং রাসুলে বিশ্বাসী তাওহীদবাদী ছাড়া ভিন্ন কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা যাবেনা। যদিও তারা নিজেদেরকে আমাদের হিতাকাঙ্খী, কল্যানকামী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে। তবুও তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে । কারণ উপরে উপরে তারা বন্ধুত্ব দেখালেও ভেতরে ভেতরে আমাদের শেষ করার ষড়যন্ত্র আঁকে। তারা যে আমাদের নিয়ে কত মারাত্মক ষড়যন্ত্র করছে তার কিছু অংশ তাদের বক্তৃতা লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে গেছে।
.
আমরা অনেক সময় তাদের ইফতার মাহফিলে অংশ গ্রহণ, ঈদ রোজায় শুভেচ্ছা জ্ঞাপন বা মুসলিমদের নিয়ে দু চারটা ভালো কথা শুনে ধোঁকা খেয়ে যাই। ভাবতে থাকি তারাই আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু, কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে তারা আমাদের ধ্বংসের জন্য বাহিনী প্রস্তুত করছে এবং এর জন্য অন্যন্য শত্রুদের সাথে জোট করছে সেসব বেমালুম ভুলে যাই।
.
এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে এই শিক্ষা দিলেন, যেন আমরা তাদের বাহ্যিক ভালো আচরণ দেখে গলে না যাই এবং তাদেরকে বন্ধু বা আপন ভাবতে শুরু না করি। দু চারটা কথা শুনে কাফেরদের বন্ধু ভাবার পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ, তা ঐ সকল মুসলিমরা ভাল করেই জানে, যাদের অঞ্চলে কাফেররা আক্রমন করেছিল। এই তো কয়েক বছর আগে ভারতের গুজরাট, দিল্লি সহ বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গা হয়েছে। সেসময় পাড়ার ওই সকল হিন্দুরাই মুসলিমদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে, যাদেরকে তারা দাঙ্গা শুরু হওয়ার আগে ভাই-কাকা-দাদা বলে ডাকতো এবং আপন ভাবতো।
.
এজন্য আমাদের করণীয় হবে, আমরা যেমনিভাবে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর দু চারটা ভালো কথা শুনে তাদেরকে বন্ধু মনে করবোনা, তেমনি আশেপাশের আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ কাফেরটাকেও আপন বা বন্ধু বানাবোনা। তবে হ্যাঁ, পাড়া-পড়শী হিসেবে বা মানুষ হিসেবে কুশল বিনিময় করতে বা ভালো আচরণ করতে বাধা নেই, কিন্তু অন্তরঙ্গ বন্ধু বানানোর ক্ষেত্রে সাবধান থাকবো।
করেছেন
TamimAdnani
শত্রু-মিত্র যাচাইয়ের মূলনীতি-
.
আমরা প্রায় সময়ই শত্রু-মিত্র চিনতে ভুল করি। শত্রুকে মনে করি বন্ধু, আর বন্ধুকে মনে করি শত্রু। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনুল কারীমে শত্রু-মিত্র যাচাইয়ের মৌলিক সূত্র বলে দিয়েছেন এবং কার সাথে কেমন সম্পর্ক কেমন হবে তাও তিনি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوۡا بِطَانَۃً مِّنۡ دُوۡنِکُمۡ لَا یَاۡلُوۡنَکُمۡ خَبَالًا ؕ وَدُّوۡا مَا عَنِتُّمۡ ۚ قَدۡ بَدَتِ الۡبَغۡضَآءُ مِنۡ اَفۡوَاهِهِمۡ ۚۖ وَ مَا تُخۡفِیۡ صُدُوۡرُهُمۡ اَکۡبَرُ ؕ قَدۡ بَیَّنَّا لَکُمُ الۡاٰیٰتِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ ﴿۱۱۸﴾
হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের নিজেদের অর্থাৎ মুমিনদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না। তারা তোমাদের মারাত্মক ক্ষতি কামনা করে। তাদের মুখ থেকে তো শত্রুতা প্রকাশ পেয়েই গিয়েছে। আর তাদের অন্তরসমূহ যা গোপন করে, তা আরো ভয়াবহ। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্ট বর্ণনা করেছি, যাতে তোমরা উপলব্ধি করতে পারো। (সুরা আলে ইমরান-১১৮)
.
এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা শত্রু-মিত্র বানানোর মূলনীতি বলে দিয়েছেন। মূলনীতিটা হলো আল্লাহ এবং রাসুলে বিশ্বাসী তাওহীদবাদী ছাড়া ভিন্ন কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা যাবেনা। যদিও তারা নিজেদেরকে আমাদের হিতাকাঙ্খী, কল্যানকামী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে। তবুও তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে । কারণ উপরে উপরে তারা বন্ধুত্ব দেখালেও ভেতরে ভেতরে আমাদের শেষ করার ষড়যন্ত্র আঁকে। তারা যে আমাদের নিয়ে কত মারাত্মক ষড়যন্ত্র করছে তার কিছু অংশ তাদের বক্তৃতা লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে গেছে।
.
আমরা অনেক সময় তাদের ইফতার মাহফিলে অংশ গ্রহণ, ঈদ রোজায় শুভেচ্ছা জ্ঞাপন বা মুসলিমদের নিয়ে দু চারটা ভালো কথা শুনে ধোঁকা খেয়ে যাই। ভাবতে থাকি তারাই আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু, কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে তারা আমাদের ধ্বংসের জন্য বাহিনী প্রস্তুত করছে এবং এর জন্য অন্যন্য শত্রুদের সাথে জোট করছে সেসব বেমালুম ভুলে যাই।
.
এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে এই শিক্ষা দিলেন, যেন আমরা তাদের বাহ্যিক ভালো আচরণ দেখে গলে না যাই এবং তাদেরকে বন্ধু বা আপন ভাবতে শুরু না করি। দু চারটা কথা শুনে কাফেরদের বন্ধু ভাবার পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ, তা ঐ সকল মুসলিমরা ভাল করেই জানে, যাদের অঞ্চলে কাফেররা আক্রমন করেছিল। এই তো কয়েক বছর আগে ভারতের গুজরাট, দিল্লি সহ বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গা হয়েছে। সেসময় পাড়ার ওই সকল হিন্দুরাই মুসলিমদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে, যাদেরকে তারা দাঙ্গা শুরু হওয়ার আগে ভাই-কাকা-দাদা বলে ডাকতো এবং আপন ভাবতো।
.
এজন্য আমাদের করণীয় হবে, আমরা যেমনিভাবে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর দু চারটা ভালো কথা শুনে তাদেরকে বন্ধু মনে করবোনা, তেমনি আশেপাশের আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ কাফেরটাকেও আপন বা বন্ধু বানাবোনা। তবে হ্যাঁ, পাড়া-পড়শী হিসেবে বা মানুষ হিসেবে কুশল বিনিময় করতে বা ভালো আচরণ করতে বাধা নেই, কিন্তু অন্তরঙ্গ বন্ধু বানানোর ক্ষেত্রে সাবধান থাকবো।
করেছেন
TamimAdnani
রাম মন্দির উদ্বোধন: বাবরী মসজিদের কান্না
.
বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে রাম মন্দির নির্মাণের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল এক শতাব্দীরও আগে। সর্বপ্রথম ১৮৮৫ সালে হিন্দু নেতা মহন্ত রঘুবীর দাস বাবরী মসজিদ প্রাঙ্গনে রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি চেয়ে ফৈজাবাদ আদালতে মামলা করে। কিন্তু আদালত তা খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে সাতচল্লিশে দেশভাগের পর আবার শুরু হয় ষড়যন্ত্র। দেশভাগের দুই বছর পর ১৯৪৯ সালে মসজিদের পাশে এক জায়গায় আটদিনব্যাপী রামনাম সংকীর্তনের আয়োজন করা হয় এবং বলা হয় শেষদিন রামের আবির্ভাব হবে। ঠিকই ২২/২৩ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে অভিরাম দাস নামক এক হিন্দু কুলাঙ্গার মসজিদের ভেতর কথিত রামের শিশুমূর্তি রেখে আসে। তখন স্থানীয় মুসলিমরা এই কুচক্রীর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর (অভিযোগ) দায়ের করলেও সেটাকে আমলে নেয়নি প্রশাসন। এদিকে হিন্দুত্ববাদীরা চারদিকে ছড়িয়ে দেয় যে, রাম নিজেই মসজিদে আভির্ভূত হয়েছেন। একথা শুনে বিভিন্নস্থান থেকে হাজারো হিন্দু মসজিদ প্রাঙ্গনে পূজা করতে ছুটে আসে। ততকালীন প্রশাসন এসব বন্ধ না করে সংঘাতের আশংকার কথা বলে নামায বন্ধের নির্দেশ দেয়। সেই থেকে ১৯৯২ সালে আরএসএস, শিবসেনা, বজরংদল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও অন্যন্য উগ্রহিন্দুত্ববাদী কতৃক মসজিদের শাহাদাত পর্যন্ত নামায আদায়ের অনুমতি পায়নি মুসলিমরা।
.
মসজিদ ধ্বংস ও দাঙ্গা-
১৯৮৪ সালে বিশ্বহিন্দু পরিষদ রাম মন্দির নির্মাণের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির প্রধান বানানো হয় বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানিকে। এই কমিটি গঠনের পর মন্দির নির্মাণের ষড়যন্ত্র আরো জোরদার হয়। এর দুবছর পর ১৯৮৬ সালে ফৈজাবাদ আদালতের জজ কে এম পান্ডে মসজিদের তালা খুলে হিন্দুদের পূজা আর্চনার অনুমতি দেয়। এরপর ১৯৮৯ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদ সংলগ্ন জায়গায় মন্দিরের ভিত্তিস্থাপন করে এবং ১৯৯০ সালে মসজিদের আংশিক ক্ষতি করে। এই ঘটনার দুই বছর পর ১৯৯২ সালে সম্মিলিত উগ্র হিন্দুত্ববাদী বাহিনী আক্রমন করে পুরো মসজিদকে শহীদ করে দেয়। ঐ সময় পরিকল্পিত দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মুসলিম শাহাদাত বরণ করেন। এর ঠিক দশ বছর পর ২০০২ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদ প্রাঙ্গনে মন্দির নির্মাণের জন্য হাজার হাজার সমর্থক জড়ো করে। এখান থেকে ট্রেনে করে ফেরার পথে নিজেদের মধ্যকার ঝগড়ার জেরে দেয়া আগুনে অর্ধশতাধিক করসেবক পুড়ে মারা যায়। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে মুসলিমদের নাম জড়িয়ে 'গুজরাটের কসাই' খ্যাত মোদির নেতৃত্বে গুজরাতে মুসলিম গণহত্যা শুরু হয়। এতে দশ সহস্রাধিক মুসলিম শাহাদাত বরণ করেন।
.
বিজেপির উত্থান-
১৯৮৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি মাত্র ২টি আসন লাভ করে, তখন তারা রামমন্দির ইস্যুকে নিজেদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে গ্রহণ করে। এই ইস্যুকে জিইয়ে রাখার জন্য তারা সভা সেমিনার/রথযাত্রা ইত্যাদির আয়োজন করে। এতে তারা সফলও হয়। মাত্র পাঁচ বছরে তাদের সংসদ সদস্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৬ তে। ১৯৯০ সালে আদভানীর নেতৃত্বে রথযাত্রা শুরু হয়, একে রথযাত্রা না বলে রক্তযাত্রা বলাটাই মনে হয় বেশি শ্রেয় হবে। সে সময় হিন্দুরা জায়গায় জায়গায় মুসলিমদের উপর আক্রমণ করে এবং বাড়িঘরে আগুন লাগায়। এই ঘটনায় অনেক মুসলিম শাহাদাত বরণ করেন। এরপর ১৯৯২ সালে এই আদভানীর নেতৃত্বেই বাবরী মসজিদ শহীদ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ২৮২ আসন নিয়ে 'গুজরাটের কসাই' খ্যাত মোদীর নেতৃত্বে সরকার গঠন করে।
.
মন্দির নির্মানের রায় ও উদ্বোধন-
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট মসজিদের জায়গা তিনভাগ করে এক ভাগ মুসলিম পক্ষকে আরেকভাগ নির্মোহী আখড়াকে এবং বাকি অংশকে হিন্দুদের দেয়ার রায় দেয়। কিন্তু উভয়পক্ষ এই রায়ের ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ওই স্থানে মসজিদের নিচে মন্দিরের কোন অবকাঠামো না পাওয়া স্বত্ত্বেও হিন্দুদের খুশি করার জন্য তাদের পক্ষে রায় দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয় মন্দির নির্মাণের। শুরু হয় মন্দির নির্মাণের কাজ। গত ২২শে জানুয়ারী কসাই মোদী মহাসাড়ম্বরে মসজিদের স্থানে মন্দিরের উদ্বোধন করে মুসলিমদের বুকে ছুরিকাঘাত করে।
.
মসজিদের কান্না-
প্রিয় মুসলিম উম্মাহ! আমরা হয়তো এক বাবরী মসজিদ ধ্বংসের ইতিহাসই জানি। কিন্তু ভারতে এমন ঐতিহাসিক কয়েক হাজার মসজিদ আছে। যেগুলোকে মুশরিকরা মন্দিরে রুপান্তর করার পরিকল্পনা করেছে। উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা সহ অনেক রাজ্যে এমন হাজারো মসজিদ এখন একজন মাহমুদ গজনবীর মত বীরের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
.
আল্লাহর এসব ঘর আমাদের ডেকে ডেকে বলছে; হে মুসলিম উম্মাহ! আমাদের যেই মিনার হতে শত শত বছর ধরে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষনা হয়েছে সেই মিনারে আজ শিরকের পতাকা ওড়ানো হচ্ছে। যেই জমিন সিজদার জন্য সর্বদা পবিত্র রাখা হতো সেই জমিন আজ পূজা করে নাপাক বানানোর পায়তারা চলছে। যেই মেহরাবে দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেব নামায পড়াতেন এবং মানুষকে হেদায়াতের বাণী শোনাতেন সেই মেহরাব আজ কুফর শিরকের আখড়া বানানোর সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে।
.
আমাদের এই অবস্থা দেখে কি তোমাদের একটুও মন কাদেনা? আমাদের উদ্ধারে তোমরা কি মুহাম্মাদ বিন কাসিম ও মাহমুদ গজনবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারোনা? আমাদের উদ্ধারে কবে আসবে তোমরা? কবে আমাদের জমিনে পুনরায় এক আল্লাহকে সিজদা করে শত বছরের জমানো ব্যাথা দূর করবে?
...তোমরা আসবে এই অপেক্ষায়!
করেছেন
TamimAdnani