সৃষ্টিবাদ বা সৃজনবাদ বা সৃষ্টিতত্ত্ব হল ধর্মগ্রন্থের বিবরণ অনুযায়ী জীবন ও বিশ্বজগত সৃষ্টির ইতিহাসের উপর বিশ্বাস। নব্য পৃথিবী সৃজনবাদীগণ বাইবেলের জেনেসিসে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বকে সমর্থন করে বিবর্তনের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করে থাকেন। জেনেসিস অনুসারে, ঈশ্বর আদিতে বিদ্যমান বিশৃঙ্খল শূন্যতাকে সুসজ্জিত করে তা থেকে জীবন সৃষ্টি করেছেন। অন্যান্য ধর্মে সৃষ্টিতত্ত্বের পৃথক পৃথক পৌরাণিক ব্যাখ্যা রয়েছে। এর প্রথম উদ্যোগটি ক্রিয়েশিয়ো এক্স নিহিলো নামে পরিচিত। ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ হল কিছু নেই বা শূন্য থেকে সৃষ্টি।
হিপ্পোর অগাস্টিনের ন্যায় আরও বহু লেখক হাজার হাজার বছর ধরে ঈশ্বর বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন এই মতবাদটি শিক্ষা দিয়ে এসেছেন।
১৮শ শতাব্দীতে বিবর্তন মতবাদের ইতিহাস বিজ্ঞমহলে প্রাধান্য বিস্তার করায়, পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আব্রাহামীয় ধর্মসমূহ ও জেনেসিসে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বসমূহ জীববিদ্যা ও অন্যান্য বিজ্ঞানের সাথে পুনরায় একীভূতকরণের প্রবণতা শুরু হয়। যারা দাবি করেন যে, সকল প্রজাতির জীব পৃথকভাবে সৃষ্টি হয়েছে তাদেরকে সাধারণত সৃজনবাদের সমর্থক বলা হলেও, বিপরীতভাবে চার্লস ডারউইন ও তার সমর্থকদের "বিবর্তনবাদী" উপাধির সাথে সাদৃশ্য রেখে তাদেরকে "সৃজনবাদী"ও বলা হয়ে থাকে।
সময়ের ধারাবাহিকতায় সৃজনবাদ-বিবর্তনবাদ বিতর্ক বিকাশের সাথে সাথে, "বিবর্তনবাদ-বিরোধী" নামক পরিভাষাটি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেতে থাকে। বর্তমানে জানা যায় যে, ১৯শতকে মৌলবাদী প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানগণ বিজ্ঞানীদের দ্বারা সমর্থিত ভূতত্ত্ব ও বিবর্তনবাদের সপক্ষের তত্ত্বসমূহের বিরোধিতায় প্রথম সৃজনবাদী আন্দোলনের সূচনা ঘটান।
২০শতাব্দীতে, ইসলাম এবং ইহুদি ধর্মেও সৃজনবাদী আন্দোলনের উত্থান ঘটে।
আস্তিক বিবর্তনবাদ, যা বিবর্তনীয় সৃজনবাদ নামেও পরিচিত, তা হল পৃথিবীর বয়স ও বিবর্তনভিত্তিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহের সাথে ধর্মকে একীভূতকরণের একটি প্রয়াস। পুরোনো পৃথিবী সৃষ্টিতত্ত্বকেও (ওল্ড আর্থ ক্রিয়েশনিজম) এই মতবাদে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।